জাতচক্ষু
মেধাবী শিয়াল তাজা মুরগির হাড় চিবোবে,
আমরা তার চাতুরীর প্রশংসা করবো
প্রাকৃত শিশুর কাঁধ হবে প্রত্যাশিত সেতু,
রাজা-উজির সজ্জিত বুট পায়ে হেঁটে যাবে,
আমরা বাহ্বা দিব
এখানে জুতা মেরে গরু দান হবে
আমরা কৃতার্থ হব।
গরু মেরে জুতা খেয়ে কসম হবে,
আমরা বিগলিত হব।
সাদা দেয়ালে আমাদের সুরাচ্ছন্ন চোখ রেখে বলবো,
“কী সৌন্দর্যময়ী শরত আকাশ আমাকে টেনে নিচ্ছে বুকে,
আমি নিষ্কলুষ শুভ্র মেঘ সারা আকাশ জুড়ে উড়ব”
কোকিল চুপ, শালিক গাইবে গান।
ভাবুক বিড়ালের বই স্টলে স্টলে
আমরা মলাটে হাত হাতড়াব!
জাতচক্ষু দেখবে শান্তির পায়রা,
বাতাসে ধূপের ধোঁয়া পবিত্র, আর পবিত্রতম আমাদের প্রাণ!
অন্তঃসারশূন্য
এবং ওভাবে বলতে গেলে আমি বিভিন্ন দ্বীপের ভিতর
অবিকল মানুষের চেহারা দেখেছি। আর সেসবের চেয়েও
যেভাবে কটাক্ষ তেড়ে আসে,
ছুটে আসে সোজা পথে তীক্ষ্ণতম শর!
এবং মানুষের কণ্ঠস্বর, যেখানে খুঁজেছি
হয়তো খুব কাছ থেকে অনেক দূরে সুকৌশলে হারিয়ে গেছে কোথাও!
তবুও কোথাও তো পেয়েছি কৃত্রিম হোক
ঘন কুয়াশায়, সাময়িক উষ্ণতার মানবিক চাদর!
চেনা বিশ্বে এমন মহার্ঘ মহিমা
আমাদের অনুপ্রেরণা হয়েছে চিরকাল।
মানুষিক আকাল তবুও ঘুচেনা কিছুতেই!
মানুষের সর্বনাশে যে অলৌকিক প্রশান্তি পেয়ে এসেছি
প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে,
তার চেয়েও নৃশংস তৃপ্তি আমাদের চোখের ভেতরে!
উর্দ্ধারোহণের নেশায় জন্মান্ধ দুপায়ে মাড়িয়ে গেছি
পৃথিবীর ফুল-পতঙ্গ আর ফসলের জমি।
সমস্ত জ্ঞান আর মেধা চাতুর্য হয়ে গেলে পরে
দক্ষ হাতে নিপুণ তুলিতে যতোই আল্পনা আঁকি
পৃথিবী হয়ে উঠে এক সুদর্শন-সুগঠিত ফুটো কলসি।
অশ্রুকেই কি কান্না বলে?
তারপর বয়স বাড়ে নর-নারীদের।
মানুষ আসে মানুষ যায়,
কেউ থাকে অপেক্ষায়,
কেউবা থাকে না, চলে যায়
কেউ কিছু বলে যায়
কেউ আবার বলেনা।
তারপর মরে যায়।
একে একে সবারই মৃত্যু হয়, ভালোবাসারও।
আমাদের খুব কষ্ট হয়, আমরা কিছুদিন কাঁদি
তারপর আমাদেরও একদিন মৃত্যু হবে ভেবে
কাজে লেগে যাই, ধীরে ধীরে ভুলে যাই-যারা মরে গেছে-মৃত্যু হবে।
মনে থাকেনা কারা ভালবেসে হেসেছিল, কেঁদেছিল, চলে গেলো কারা
কেন গেলো? কিছু কি বলেছিলো? ফিরবে আবার?
কেনো ফিরবে? আরো কিছু রয়ে গেছে বাকি? আরো ফাঁকি!
আসবে আবার! কী দরকার?
অবশ্য আসলে ভালো! না আসলে? কিইবা হবে?
এতো কি আর সময় আছে, ভাবতে বসবো!
কাজ আছে না?
কর্মই জীবন, জীবন কর্ম!
তবুও ধর্ম, হিংসা-বিদ্বেষ, রেষারেষি, দলাদলি, লোভ-লালসা
রক্তে-রক্তে কত লড়াই, কত বড়াই, কত মৃত্যু পথে-ঘাটে!
তবুও সুর, তবুও বাঁশি, হাসাহাসি
ভালোবাসা, আলো- আাশা, ভুবন ভোলা মাতামাতি!!
তবুও দিন-রাতের পরে, কাজের ভীড়ে
ধুম করে ঠিক বুক ফেটে এক কান্না আসে?
বিমূঢ় থাকি! বুঝে উঠতে পারিনা কিছু!
অশ্রুকেই কি কান্না বলে?
আরো কোনো কান্না আছে? ভিন্নরকম!
কেনো এমন কান্না আসে?
খুব ভয়ে? নিবিড় আঁধারে? গভীর কুয়াশায়? ঝুম বৃষ্টিতে?
দাবদাহে পুড়ে গেলে? কেউ না এলে, চলে গেলে?
মরে গেলে? অবহেলায়? উপেক্ষাতে?
নাকি শুধু শুধুই?
অকারণে!
সম্মোহনী ছায়া সম্মেলন
আমি ফিরে যাবো কাফনে মোড়ানো ছায়া সম্মেলনে,
ভয়াল রাত্রিদের অন্তরে,
অনন্তর ভয়, শিহরন, সৌন্দর্য আর রহস্যের সম্মিলনে
সে এক অপূর্ব জগতের স্বাদ।
জাদুর গালিচায় অক্লেশে পাড়ি দিব ঝরনা, নদী, আর পাহাড়।
গহিন অরণ্যে প্রাচীন শ্যাওলা পড়া পরিত্যক্ত মন্দিরের
লুকনো আতঙ্ককে টেনে আনবো দিনের আলোয়।
খুব অচেনা সবুজে ঘেরা নিস্তব্দ বাড়িটিতে আমি
তৃতীয়বারের মতো আবার যাবো।
আর সেই কিশোর, যার স্বেচ্ছা বন্দিত্বে বেঁচেছিল
অতগুলো শিশুপ্রাণ, খোঁজে বের করবো তাকে।
নিশ্চয়ই সে দানব হেরে গেছে তার কাছে, অতোদিনে
তার প্রজ্জ্বলিত অগ্নিচোখ পুড়িয়ে দিয়েছে সমস্ত অশুভ শক্তিকে।
এবার দেখলে আমায় চিনবে তো সে?
বলবে তো, “এ পথ ধরে চলে যাও নির্ভয়ে”
ঝাউবনের পাশ ধরে, খানিক দূরে প্রকাণ্ড গাছেদের ছায়া,
পাতার ফাঁকে রৌদ্দুরের লুকোচুরি,
আমি সেই ধূলোউড়া পথ ধরে হাঁটবো।
“সময়, বাড়াবাড়ি করো না। বড় বেশি বুদ্বির জালে আটকা পড়ছি আমি”
রঙচঙা আঁধার, তারাদের হাসি, মায়াময় জোৎস্না
আর জোনাকিরা আমার স্পর্শহীন, ঘুমিয়ে পড়ে কেমন বিষাদে মলিন।
আর সেই কুকুরটাতো কবেই মরে গেছে।
একটা সামান্য ইঁদুরের চলার শব্দেও যে ঘেউ ঘেউ করে উঠতো।
কী সতর্কতা আর বিশ্বস্ততার দৃষ্টান্ত রেখে মরে গেল!
সে কী মর্মান্তিক মৃত্যু!
অপাঙক্তেয়
মনের সমস্ত নীল আকাশে ছড়িয়ে আমরা হয়ে যাই নিরাকাঙ্ক্ষী আকাশ।
অথচ আজকাল আকাশ তোমার লাগেনা ভালো,
পাহাড়ের ছায়ায় রেখেছ হৃদয়
মৃত্তিকা আর মৃত্তিকা মায়া-অমসৃণ, অপাঙক্তেয়-ভুল মনে হয়।
স্বৈরিণী নদীর কাছে চেয়েছিলে তৃষ্ণার জল হয়তোবা,
‘হয়তোবা’ বলতে হয়,
যেহেতু আমরা নিশ্চিত জানি না কিছুই।
আসন পেতে বসে আছে পুরনো পরিচয়।
তার তরে তুলে রাখা সময়ের ঝুল হয়ে গেছে বাসি
আমাদের জীবন তবু হয়নি বিফল,
আমরা ভালবাসি।
মানুষ-আলো-নক্ষত্রের আড়াল হামেশাই আমাদের কাঁদায়।
পুরুষানুক্রমে নির্বন্ধ লেখা হয় তবু ধূসর খামে
নামে কিংবা বেনামে,
“ক্ষণিক অবসর যদি পাও
শুকোতে দিও ভালোবাসা বিকশিত জ্যোৎস্নায়
সময়ের চক্রান্তে, কে জানে প্রেমে ছাতলা পরে যেতে পারে!”
তোমাকে অনুবাদ করবো বলে
তোমাকে অনুবাদ করবো বলে
অভিধানের পর অভিধান জড়ো করলাম
জার্মান, ফারসি, গুজরাটি, সিংহলি, সোয়াহিলি-বছরের পর বছর
চণ্ডীদাসও পারতো না, বিশ্বাস করো!
এ শুধু ছিপ ফেলে বসে থাকা নয়,
অভিধানের পর অভিধান
শব্দের পর শব্দ খুঁড়ে খুঁড়ে
শুধু তোমাকে অনুবাদ করবো বলে,
কোথাও যাওয়া হয়নি আমার!
নামিনি সমুদ্রে, সৈকতে পা ফেলে,
খুব পাশাপাশি কেউ, দিগন্ত বিস্ফারিত নীল, উচ্ছ্বাসিত ঢেউ,
চেনা-অচেনা নদীর কথা, নদের কথা
গল্প বলে বলে,
সুখ-বিহ্বল-আকুলতা,
প্রেম-অপ্রেমে, পূর্ণতা-প্রাপ্তি-শূন্যতা, কিচ্ছু নয়!
নয় কোন গান, অভিমান
স্রোত ভুলে, কূল ভুলে, কেবল স্থলে, স্বল্পতম প্রাণ!
অবিকল আত্মভোলা অলক্ষ্যে অবিরাম,
শুধু তোমাকে অনুবাদ করবো বলে
অভিধানের পর অভিধান জড়ো করলাম!
বেদনাকে রাখতে চাই না একাকী
খরোদ্দীপ্ত মধ্যরাতে,
নিরবতার বুকে, হাই হিল পরে,
ঠক ঠক করে
খুব জোরে শব্দ করে হাঁটি।
যতদূর পারি, যতটুকু,
বেদনাকে রাখতে চাই না স্তব্ধ, একাকী।
Discussion about this post